পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালায় মেহেদী বাহিনী
ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, পাইপ ও ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে হামলা চালায় মেহেদী বাহিনী।
তবে অভিযুক্ত মেহেদী হাসানের দাবি, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আগে তার ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। যা পুলিশ আসার পরও দুই-তিন মিনিট স্থায়ী হয়।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের সঙ্গে মেহেদীর এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। পরে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় গত ৮ মে রাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী হাসানের অনুসারীদের সংঘর্ষের সময়ের কয়েকটি ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, পাইপ ও ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে হামলা চালায় মেহেদী বাহিনী। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত সাত জন আহত হন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তিন দিন ধরে চলা উত্তেজনার খবর পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। বরং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মিলনের সঙ্গে সখ্যতার কারণে তারই চাচাতো ভাই মেহেদীর গ্রুপকে সমর্থন দিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সময়কার ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, পাইপ ও ক্রিকেট ব্যাট ছিল। ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা গেছে, পুলিশের পাশাপাশি হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হামলাকারীদের হাতে থাকা একই ধরনের পাইপ পুলিশ সদস্যদের হাতেও দেখা দেখা গেছে।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুষারকে পেটাচ্ছেন দোদুল নামের এক যুবক। এ সময় তার সঙ্গে পাইপ হাতে হামলায় অংশ নেন সিজানসহ আরও কয়েকজন যুবক। পাশে এক পুলিশ সদস্য থাকলেও তিনি তুষারকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে লাঠি ও পাইপ হাতে মেহেদীর অনুসারীদের দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে শিপলু, সিজান, নুরনবী, বাবু ও লাকুকে পাইপ হাতে পুলিশের সঙ্গে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
এরই মধ্যে এসব ভিডিও দেখে হামলায় অংশ নেওয়া যুবকদের শনাক্ত করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, তারা সবাই মিলন ও মেহেদীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালান। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছাত্রলীগ কর্মী লিটনের কানের পেছনের অংশ কেটে যায়। দোদুল ও অন্য কয়েকজনের হামলায় গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুষার। সংঘর্ষে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদীসহ তার গ্রুপেরও কয়েকজন আহত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ওই সময় আমি তিনকোণা মোড়ে ছিলাম। মেহেদী গ্রুপ পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েছিল। পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধারণা করেননি, তাদের ওপর হামলা হতে পারে। মেহেদী ও মিলনের অনুসারীরা প্রথমে ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে ধরে নিয়ে পেটানো শুরু করেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গলির ভেতর থাকায় এগিয়ে আসতে পারেননি। ফলে তারা একতরফা হামলার শিকার হন।’
‘হামলার সময় যুবলীগের মিলন ঘটনাস্থলে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মূলত যুবলীগের ছেলেরাই হামলায় অংশ নিয়ে মেহেদীকে সহায়তা করেছেন। মিলন না থাকলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো না’ বলেন এই প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী ও তার সঙ্গী শিপলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমান কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় সংক্ষুব্ধ ছিলেন
মেহেদী। তাকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন তারই চাচাতো ভাই ও যুবলীগ নেতা মিলন। সেদিনের হামলায় মিলন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
যদিও মিলনের দাবি, হামলায় ইন্ধন নয়, তিনি ঘটনাস্থলে থেকে মারমারি বন্ধের চেষ্টা করেছেন। মিলন বলেন, ‘মেহেদী আমার ভাই। তার ওপর ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। আমি সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছি। আমি যাওয়ার পর কোনও গণ্ডগোল হয়নি।’
এ বিষয়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘তিন দিন আগে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আমার মাথা ফেটে যাওয়ায় উভয়পক্ষের সংঘর্ষ লেগে যায়। কিন্তু আমাকে হাসপাতালে নেওয়ায় সংঘর্ষের সময় ছিলাম না। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘মেহেদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন যুবলীগ নেতা মিলন। মিলনের প্রশ্রয়ে মেহেদী বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মিলন ভাই হিসেবে, মেহেদী ও তার লাঠিয়াল বাহিনীকে সমর্থন করছেন। ছাত্রলীগের ওপর হামলায় মিলনও জড়িত।’
হামলার বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তমাল বলেন, ‘মেহেদী ও তার ভাই মিলনের ছত্রছায়ায় উপজেলায় মাদক চোরাচালান হয়। থানার ওসির সঙ্গে তাদের সখ্যতা। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান কমিটিতে মেহেদীর স্থান হয়নি। তার মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করায় ভাই মিলনের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করেছেন।’